উইপোকা

ন্ধকারের মধ্যে ঘরের প্রতিটি কোণ, প্রতিটি আসবাবে একবার তীক্ষ্ণভাবে দৃষ্টিপাত করেন।

- জয়ন্ত সরকার

ওয়েলকাম, স্পিকিং ফ্রম টুলি পেস্ট কন্ট্রোল। প্লিজ টেল আস ইয়োর প্রবলেম.... অল্প বয়সি এক মহিলার কণ্ঠস্বর ও ইংরেজি ভাষাটা শুনে প্রথমে একটু যেন আড়ষ্টই হয়ে গেলেন সুতপনবাবু। থেমে থেমে বললেন, “টারমাইট মানে বাড়িতে উইপোকা'

‘শুধুই উই’ মেয়েটি এবার বাংলায় বলল, “আরশোলা, ইঁদুর, মাছি, ছারপোকা—সব কিছুরই এক্সপার্টাইজ আছে আমাদের।' ‘আপাতত উইটাই সমস্যা', একটু থেমে কথাটা বললেন সুতপনবাবু।

‘আপনি আপনার নাম, ঠিকানা ফোন নম্বর বলুন। আমাদের লোক গিয়ে সার্ভে করে এস্টিমেট এবং টার্মস অব কন্ট্রাক্ট জানিয়ে দেবে আপনাকে।' ধীরে-ধীরে তথ্যগুলি দিয়ে মোবাইলটা টেবিলে নামিয়ে রাখলেন সুতপনবাবু। একটু উষ্মা নিয়ে বললেন, ‘আবার একগাদা টাকার শ্রাদ্ধ। হার্ডওয়্যারের দোকানে উই মারার যে ওষুধটা পাওয়া যায় ওতেই কেরোসিন মিশিয়ে লাগালে কী ক্ষতি ছিল?'

‘গত বছর তো লাগালে’ অয়তি চায়ের কাপদুটো টেবিলে রেখে বলল, ‘কয়েকমাস পরে তো যে-কে সেই। এক দেওয়াল ছেড়ে অন্য দেওয়ালে। তাছাড়া যা বিশ্রী দাগ হয়ে যায়— ‘কী এমন রাজপ্রাসাদে বাস করি আমরা' সুতপন একটু রুষ্ট স্বরে বললেন, ‘এতদিনের বাড়ি। এখানে ড্যাম্প, ওখানে রংচটা—'

‘সবই তো নজরে পড়ে', অয়তি চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন, ‘সেদিন যদি লেপ বার করতে কাঠের আলমারিটা না খুলতাম, কী হতো বল তো? কত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র খেয়ে ফেলেছে মরণগুলো—' আর কথা বাড়ালেন না সুপন। টিভির ব্রেকিং নিউজটার দিকে নজর চলে গেল তাঁর। দু'দিনের মধ্যেই এল পেস্ট-কন্ট্রোল কোম্পানিটির রিপ্রেজেনটেটিভ। দোতলার বসার ঘরটায় বসে নিজের ভিজিটিং কার্ডটা দেখিয়ে প্রথমেই প্রশ্ন করল, 'আপনাদের বাড়িটা কত স্কোয়ারফুট হবে?” সুতপন এর সঠিক জবাব দিতে পারলেন না। চার কাঠা জমির ওপর তাঁদের এই পৈতৃক সম্পত্তিটাকে আড়াইতলা বলা যায়। দোতলার ওপরের ছাদের কিছুটা অংশ নিজেদের জন্য রেখে নীচের দুটি তলাকে দুই ছেলের জন্য সমানভাবে সাজিয়ে দিয়েছিলেন বাবা। বাড়ির নকশাটা কোথায় আছে জানা নেই সুতপনের। ছেলেটিকে তাই বললেন, ‘আপনিই বরং মাপজোক করে একটা হিসেব বলে দিন না।'