ইতিহাসবিদ ও ভাষাচিন্তক

সকল অর্থ-বৈচিত্র্যকে স্পষ্ট করে বাইরে প্রকাশ করো তুমিই। যা কিছু প্রত্যক্ষ তার অর্থ প্রদর্শিত হয় তোমারই শক্তিতে। হে তুর্যা [বৈখরী], তোমাকে বন্দনা করি। ধ্বন্যালোক: অভিনবগুপ্ত।

কশো বছর সম্পূর্ণ করার কয়েক সপ্তাহ আগেই রণজিৎ গুহ প্রয়াত হলেন। এক দীর্ঘ জীবন। কিন্তু ওই যাপিত জীবনে তিনি মননচর্চায় সদা চলিষ্ণু, সৃজনশীল প্রশ্ন তুলতে সব সময় তৎপর। জীবনভর মেধাজীবী রণজিৎ গুহ যেন নিয়ত নিজের চিন্তার সঙ্গেই নিজে কুস্তি করতেন বরাবর শঙ্কিত হতেন এই ভেবে যে তাঁর পুরনো আমি যেন তাঁর নতুন জিজ্ঞাসু আমিটাকে পিছনে টেনে না রাখে। মেধাচর্চায় নিজেকে উত্তরণের ইচ্ছা তাঁর লেখালিখির অভিমুখকে বারবার বদলে দিয়েছে, তৈরি করেছে নানা রণজিৎ গুহের এক আলপনা। নিছক কোনও এক বিদ্যাচর্চাগোষ্ঠীর তকমায় তাঁর ভাবনাকে বিশিষ্ট করা প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যায়তনগুলির কৌশল, তা না হলে কোনও না কোনও চিরস্থির কায়েমি আদিকল্পের অনুশাসন নড়বড়ে হয়ে যায়, আত্তীকরণের কোনও সুযোগ থাকে না। রণজিৎ গুহের জীবনব্যাপী মেধাচর্চা তথা ইতিহাসবিদ্যা ভাবনা তথা ভাষাত্মচিন্তা যে-কোনও এককালিক ও দৈশিক অনুশাসনে বদ্ধ নিগড় থেকে মুক্তিকাম উৎক্রান্তির যাত্রা, আমাদের ঢোঁড়াই-এর ‘পাককী’র মতো নিরন্তর ছুটে চলেছে।