এমনই এক ঘটনার কথা বলব যা উত্তমকুমারকে রীতিমতো বেদনাহত করেছিল। উনি দুঃখে কেঁদে ফেলেন। না, শ্যুটিং বা কোনও পারিবারিক ব্যাপার নিয়ে নয়, সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে। ঘটনাটা ঠিক কী অনেকেই সেটা জানেন না। তাহলে এবার শুনুন। একসময় ‘অভিনেতৃ সংঘ’ নামে শিল্পীদের একটা সংগঠন ছিল। শ্রদ্ধেয় ছবি বিশ্বাস, জহর গাঙ্গুলি এঁরাই এই সংগঠন শুরু করেন। অভিনেতৃ সংঘের প্রেসিডেন্ট ছিলেন উত্তমকুমার। হঠাৎ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে তিনি নাকি সংঘের প্রচুর টাকা নয়ছয় করেছেন। উত্তমবাবুর মতো এরকম সৎ ও বড় মনের মানুষকে ‘চোর' এই মিথ্যে অপবাদ দিয়ে একটা চিঠি পাঠানো হয়। অভিনেতৃ সংঘের বিশেষ মিটিংয়ে। আমাদেরই প্রথম সারির একজন নায়ক ছিলেন গোটা ব্যাপারটার চক্রান্তকারী। তিনি আরও দু'চারজন অভিনেতা- অভিনেত্রীকে সঙ্গে নিয়ে উত্তমবাবুর বিরুদ্ধে এই মিথ্যে অভিযোগ আনেন। এমনকী অভিনেতৃ সংঘের অফিসঘরের দেওয়ালে ‘উত্তমকুমার চোর’-এই কথাটা পোস্টারের মতো করে লিখে টাঙিয়ে দেওয়া হয়। শুনেছি, উত্তমবাবুর ময়রা স্ট্রিটের বাড়িতেও ‘চোর’ শব্দ লেখা পোস্টারটা দেওয়ালে কে বা কারা লাগিয়ে এসেছিল। এর থেকে খারাপ কিছু হয় বলুন?
উত্তমবাবু গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে যান। যে অভিনেতৃ সংঘের জন্য তিনি প্রাণপাত করতেন, সেই সংস্থারই কয়েকজন তাঁকে কি না চুরির অভিযোগে কাঠগড়ায় তুলতে পারল?
বলেছিলেন টাকা-পয়সার ব্যাপারে আমি তো ধারেকাছেও থাকি না। তাহলে? দুঃখ আর অপমানে কেঁদে ফেলেছিলেন। পরে বিকাশ রায়ের পরামর্শে উত্তমবাবু ‘শিল্পী সংসদ' তৈরি করেন। বিকাশবাবু নিজেও একজন আইনজীবী ছিলেন। ‘শিল্পী সংসদ’ শুরু করার ব্যাপারে বিকাশবাবু কাগজপত্র বানানো থেকে শুরু করে সবরকম সহযোগিতা করেন। আমি ইচ্ছে করেই নাটের গুরু ওই প্রয়াত নায়কের নাম আর মুখে আনলাম না। উত্তমবাবু এত বড় মাপের মানুষ ছিলেন যে দু'-চার কথায় তা বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়। বড় মন তো ছিলই, তাঁর মধ্যে মূল্যবোধও ছিল ভীষণরকম। বড়দের কতটা শ্রদ্ধা করতেন নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত। ছোটদের উজাড় করে দিতেন স্নেহভালোবাসা। উত্তমবাবু ছিলেন এমনই এক ব্যক্তিত্ব, যাঁকে দেখে আমার মন শ্রদ্ধায় ভরে উঠত।
একটা ঘটনার কথা বলি। ক্যালকাটা মুভিটোন স্টুডিওতে ‘বিরাজ বউ’ ছবির শ্যুটিং চলছে। উত্তমবাবু স্টুডিওয় আসার ব্যাপারে ভীষণ পাংচুয়াল ছিলেন।
This story is from the September 2024 edition of Sukhi Grihakon.
Start your 7-day Magzter GOLD free trial to access thousands of curated premium stories, and 9,000+ magazines and newspapers.
Already a subscriber ? Sign In
This story is from the September 2024 edition of Sukhi Grihakon.
Start your 7-day Magzter GOLD free trial to access thousands of curated premium stories, and 9,000+ magazines and newspapers.
Already a subscriber? Sign In
বন্যার আগে
একটা গল্প তৈরি হতে মনের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট স্থান লাগে। বিম্বা ঠিক এমন একটা মুহূর্ত খুঁজছিল। কিন্তু বাইরের বৃষ্টি যেন তার সমস্ত চিন্তাভাবনাকে ধূসর করে দিয়েছে। মাথার উপর বেগুনি রঙের ছাতা ধরে, বৃষ্টিতে ভেজা লম্বা পোশাক আর মাটির কাদা মাড়িয়ে বিম্বা এগিয়ে চলেছে। এই বৃষ্টিভেজা দিনগুলিতে তার গল্প লেখার অভ্যাস বেড়ে উঠেছে। যদিও কবিতা তার আসল ভালোবাসা—যা মনের গভীরে নিজে নিজে প্রস্ফুটিত হয়, গর্ভস্থ শিশুর মতো। বিম্বার পাশের কটেজে থাকা মালিনীও যেন এমন এক যাপনের সন্ধানে এসেছেন। একসময়ের কর্মব্যস্ত জীবন পেরিয়ে, সিনিয়র হোমের নির্জন একঘেয়েমি থেকে বেরিয়ে প্রকৃতির কোলে এসে নিজেকে খুঁজছেন। ঝম, বিম্বার সাত বছরের সন্তান, এক বৃষ্টি ভেজা সকালে তার সরল আর মজার কথায় মালিনীর মনের জমে থাকা ক্লান্তি মুছে দেয়। যেন দীর্ঘদিনের একাকিত্বের পর নতুন করে কোনও সম্পর্কের উষ্ণতায় সিক্ত হচ্ছেন মালিনী। বৃষ্টি, অরণ্য আর মানুষের গল্প যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। জীবন কোথাও থেমে থাকে না। সময়ের স্রোতে সবই একদিন গল্প হয়ে ওঠে।
অপমান
এটি একটি অনুভূতির গভীরতা ও পরিবারের সম্পর্কের অস্থিরতা নিয়ে লেখা একটি গল্পের অংশ। বনলতা, একজন প্রবীণ মহিলা, তার শাশ্বতী ও অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অনেক অপমান সহ্য করছেন। তার জীবন নানা অস্থিরতার মধ্যে বিভক্ত, এবং তিনি কখনওই নিজের জন্য কিছু ভাবেননি, সবসময় অন্যদের জন্য নিজেকে সামঞ্জস্য করেছেন। তবে, শাশ্বতীর কথায় আহত হয়ে তিনি এক ধরনের মানসিক দৃষ্টিকোণ থেকে নিজেকে পুনর্মূল্যায়ন করতে শুরু করেছেন, বিশেষত যখন তার আত্মবিশ্বাস এবং প্রাপ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। ইরাবতী, একজন সহানুভূতিশীল বন্ধুর মতো, বনলতাকে বুঝিয়ে দেন যে নিজের মতামত প্রতিষ্ঠা করা জরুরি, এবং তাকে নিজের শান্তি ও সম্মান পুনরুদ্ধারের জন্য দুর্গাপুরে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
মিস এনসাইক্লোপিডিয়া
পিঙ্কি চক্রবর্তী, তেইশ বছর বয়সী, মুম্বাইয়ের একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করছেন এবং বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বদের জীবনপঞ্জি প্রস্তুত করতে ভালোবাসেন। তার ফেসবুক পেজে প্রতিদিনই বিখ্যাত ও অখ্যাত ব্যক্তিদের তথ্য প্রকাশ করেন, যেগুলি অনেকের জন্য অজানা থাকে। তার এই কাজের ফলে, অনেকেই তার প্রশংসা করেছেন এবং তাকে ‘মিস এনসাইক্লোপিডিয়া’ বলে অভিহিত করেছেন। পিঙ্কি একজন প্রামাণিক তথ্য সংগ্রাহক, যিনি অনেক সাহিত্যিক ও শিল্পীর জীবনভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করছেন এবং সেগুলি জনগণের সামনে তুলে ধরছেন।
সুন্দরের অন্তরমহল
পালমশায়ের গলার আওয়াজ মিহি ও মৃদু, তিনি কথা বলেন আঙুল নাড়িয়ে নাড়িয়ে, যেন হাওয়ায় ছবি আঁকছেন। গলা শুকিয়ে আসায় চা খাওয়ার ইচ্ছে জানিয়ে তিনি গুপীর দোকানে যাওয়ার প্রস্তাব দেন, যেখানে চা, টোস্ট এবং অন্যান্য নাস্তাও পাওয়া যায়। তাঁর এলাকার ইতিহাসের গল্প শোনাতে শোনাতে তিনি জানালেন, তাঁদের পূর্বপুরুষরা বাংলাদেশের নাটোর থেকে এসে মৃৎশিল্প শুরু করেছিলেন এবং এখন তাঁদের তৈরি মূর্তি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। পালমশায়ের মূর্তি তৈরির শৈলী গ্রিক বা রোমান শিল্পের প্রভাবের মতো, কিন্তু সেই সঙ্গে আছে বাঙালি নারীর সহজ সৌন্দর্য। তবে তাঁর স্ত্রী এ বিষয়ে একটু ভিন্ন মত পোষণ করেন, এবং মৃৎশিল্পের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা তিক্ত।
ভালোবাসার ফুলছাপ
ধান কাটার পরিশ্রম শেষে সন্ধ্যায় ক্লান্ত সুবল পবনের চায়ের দোকানে ঢুকেছিল। দোকানটি ঘরের কাছে, বাঁশের মাচায় বসার ব্যবস্থা। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে তিনি শান্তিতে চুমুক দিচ্ছিলেন, এমন সময় বাইরে হারান আর নিমাইয়ের গলা শুনে তার কানে এল ললিতার নাম। তারা বলছিল, ইয়াকুব মিঞার সঙ্গে ললিতার নাকি বিয়ে হবে। ললিতার মতে, সে কাউকে ভয় পায় না, নিজের কাজ করবে। তবে হারান আর নিমাই মনে করছিলেন, ইয়াকুবের পরিবারের কাছে ললিতার জন্য ভালো কিছু হতে পারে। এসব কথা শুনতে শুনতে সুবলের মন মেঘলা হয়ে গেল, বিশেষত ললিতার সিদ্ধান্তের পর।
তিন রঙের ফুল
শাসুজিত বসাক শ্বেতী হাতে ক্রেপ ব্যান্ডেজ বেঁধে দিতে দিতে বললেন, \"এখনও আগের মতোই ব্যথা আছে?\" সোমপ্রভা মুখ ঘুরিয়ে বললেন, \"এ শা, ব্যথা সহজে যাবে না। তাড়াতাড়ি করো...\" শাশ্বতী হাসলেন, \"কথায় কথায় এত রেগে যান কেন বলুন তো? রাগলে আপনার শরীর খারাপ হয়, বোঝেন না?\" সোমপ্রভা বললেন, \"হোক। তুমি মাথাব্যথা করো না।\" শাশ্বতী বুঝতে পারলেন, রাগ কমছে সোমপ্রভার। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাগও বেড়ে গেছে, তবে শাশ্বতী তা মেনে নিয়েছেন। শাশ্বতী জানতেন, রণজিৎ তাঁর মাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন, কিন্তু শাশ্বতী কখনও কখনও বিরক্ত হতেন। রণজিৎ মারা যাওয়ার পর শাশ্বতী কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছিলেন, কিন্তু সোমপ্রভা তাঁর পাশে ছিলেন।
গলি
নীলিমা মিত্র, একজন মনোবিদ, হাতে ধরা দামি মোবাইল ফোনটি থেকে চোখ তুলে তাকালেন এক দম্পতির দিকে। স্বামী-স্ত্রীর অস্বাভাবিক পরিস্থিতি দেখে, নীলিমা তাঁদের সমস্যা জানতে চাইলেন। মানসিক সমস্যা বা আবেগের জটিলতা সমাধান করতে তিনি কথা বলেন, তবে কখনও পেশাগত দৃষ্টিভঙ্গি হারান না। এই পরিস্থিতি তাঁর জন্য অস্বস্তিকর হলেও, তিনি তাঁর নিয়ম এবং পেশাদারিত্ব বজায় রেখে ক্লায়েন্টের সমস্যার মূলে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন।
মহুল ভিজা রাত
মহুলতলায় দাঁড়িয়ে আছে কাজল। বাইকটা স্ট্যান্ড দেওয়া আছে রাস্তার পাশে। অপেক্ষা করছে সে তার ভালোবাসার মানুষটার জন্য।
রুদ্রাণী রূপে মা সারদা
একুশ শতকের নারী ভাবনার সঙ্গে উনিশ শতকের মা সারদার ভাবনার সাযুজ্য নিয়ে লিখছেন পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শিব ঠাকুরের আপন দেশে
গাঢ় নীল আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে শ্বেতশুভ্র হিমালয়। পর্বতের গহিন অন্দরে ঘুরে আসার অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নিলেন কমলিনী চক্রবর্তী।