সংশোধন

গম্ভীর কণ্ঠের ডাকে চমকে গিয়ে কিশোরটি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। দেখে, তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন এক সাহেব। কিশোরটি তাঁকে 'স্যর' বলে সম্বোধন করে। এর পর তাদের মধ্যে ইংরেজিতে কথোপকথন চলতে থাকে।

- সায় ন্ত ন চ ট্টো পা ধ্যা য়

পিয়ানোর শব্দটা কানে এসে লাগছে জয়ন্তর। বেশ মনকাড়া একটা সুর বাজছে। কিন্তু কোথাও যেন একটা ভুল রয়েছে সুরটায়। জয়ন্ত সেটা বুঝতে পারে। সে নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না। সুরটার উৎস ধরে হাঁটতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে এক সময় একটা বাগানে ঘেরা সুন্দর দোতলা বাড়ির সামনে এসে পৌঁছোয় সে। বাড়িটার দোতলার বাঁ দিকের জানলা খোলা। জানলা দিয়ে সুরটা ভেসে আসছে। জয়ন্ত দ্রুত এগিয়ে যায় বাড়িটার দিকে। কিন্তু, এ কী অদ্ভুত কাণ্ড! সে যত বাড়িটার দিকে এগোচ্ছে, বাড়িটা ততই দূরে সরে যাচ্ছে। এ বার সে তার হাঁটার গতিবেগ আরও বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু কিছুতেই বাড়িটায় পৌঁছোতে পারে না জয়ন্ত। বাড়ির দূরত্ব যেন বেড়েই চলেছে। সে এ বার দৌড়তে শুরু করে। আর দৌড়তে দৌড়তে এক সময় হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায়।

ঘুমটা ভেঙে যায় জয়ন্তর। সে সোজা হয়ে উঠে বসে। বেশ কিছু ক্ষণ স্থির হয়ে বসে থাকে বিছানায়।

॥২॥ “দেখুন মি. সান্যাল, আপনার সমস্যাটা বিরল হলেও অস্বাভাবিক কিছু নয়। মনস্তত্ত্বের পরিভাষায় একে বলে 'রেকারিং ড্রিম'। যেখানে আমরা হুবহু এক স্বপ্ন বার বার দেখতে থাকি। এটা নানা কারণে হতে পারে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, মানসিক অবসাদ বা অন্য কোনও মানসিক কারণ। আসলে কী জানেন, আমাদের অবচেতন মনের গতি-প্রকৃতি আগে থেকে আন্দাজ করা ভারী মুশকিল।”

ডা. সেনের বলা এই কথাগুলো গাড়ির পিছনের সিটে বসা জয়ন্তর কানে যেন বাজছে। গত সাত দিন রাতে হুবহু এক স্বপ্ন দেখার পর সে সিদ্ধান্ত নেয়, এক জন সাইকায়াট্রিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করার। তাই আজ ডা. অনিমেষ সেনের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে তাঁর চেম্বারে গিয়েছিল সে। এখন ফিরছে।

জয়ন্তর পুরো নাম জয়ন্ত সান্যাল। বয়স পঁয়ত্রিশ। পেশায় আইনজীবী। পেশাগত কারণে তার মানসিক চাপ থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে এ রকম অদ্ভুত স্বপ্ন! যেখানে তার তিন পুরুষের মধ্যে কেউ কখনও হারমোনিয়াম পর্যন্ত ছোঁয়নি, সেখানে স্বপ্নে পিয়ানোয় বাজা সুর তার এত পরিচিত লাগছে কী ভাবে! অথচ ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর সে সুরের কিছুই আর তার মনে থাকে না। ডা. সেন যখন তাকে বললেন, “আচ্ছা মি. সান্যাল, সুরটা একবার গুনগুন করুন তো।”