দেশের খোঁজ

স্মৃতি, সত্তা, ভবিষ্যৎ একটা মাটির মণ্ডের মতো অর্বাচীন অবয়ব নিয়ে তার তাত্ত্বিক পরিণতিকে জব্দ করে চলে নিয়ত।

প্রবন্ধের শিরোনামে 'দেশের খোঁজ’ এই শব্দ দু'টির ব্যবহার দু'টি অনিবার্য কূটাভাসের নিরিখ রচনা করে। ‘দেশ’ শব্দের উচ্চারণে মানচিত্র চর্চিত যে কার্টোগ্রাফিক নির্ণীতির প্রসঙ্গ আমাদের মনে আসে, তাকে পরের মুহূর্তেই বিচলিত করে দেশের বিমূর্ত স্থিতিহীনতা। দেশ বিষয়ে আলোচনা বা চর্চার বিস্তারে প্রসঙ্গতই যে ভাবে রাজনীতি অথবা ধর্ম কিংবা জাতিসত্তার প্রশ্ন স্বাভাবিক কারণেই প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে, একই ভাবে মুহূর্তে তাকে ধ্বস্ত করে দিতে পারে দেশ বিষয়ে ব্যক্তির নিতান্ত ব্যক্তিগত স্থানিক অথবা না-স্থানিক, ক্ষণস্থায়ী কল্পলোক, যাকে সে দেশ বলে জানে। বিদ্যায়তনিক পরিসরে 'দেশ' বিষয়ে আমরা যে ভাবে ভাবতে শিখি আমাদের প্রতর্ক-উত্তর ( beyond discourse) সত্তা হয়তো সে ভাবে সব সময় দেশ বিষয়ে ভাবতে প্রস্তুত থাকে না। বর্তমান প্রবন্ধ এই ambivalence অথবা দোটানাকে চিহ্নিত করার প্রয়াস। অপর দিকে 'খোঁজ' শব্দটিও স্বভাবতই শুধুমাত্র কোনও বীক্ষণকে চিহ্নিত করে না। খোঁজার ধারণার ভিতরে একটা স্থানিক আর কালিক ইতিহাসচিন্তার বীজ রয়ে যায়, যাকে নিশ্চিত কোনও একটি আখ্যানের সূচক হিসাবে পড়া চলে না। ইংরেজি ভাষার কবি টি এস এলিয়ট যাকে বলেন “mixing memory and desire” তারই খানিক আভাস রয়ে যায় এই খোঁজ শব্দের ভিতরে। স্মৃতি, সত্তা, ভবিষ্যৎ একটা মাটির মণ্ডের মতো অর্বাচীন অবয়ব নিয়ে তার তাত্ত্বিক পরিণতিকে জব্দ করে চলে নিয়ত। মনে থাকা, মনে রাখা, আর মনে পড়ার বিবিধ অনিয়ত বা কনটিনজেন্ট চলনে 'খোঁজ' শব্দের ভিতরের বীক্ষণের ধারণা প্রতিহত হতে হতে চলে ক্রমাগত। ‘কিসের খোঁজ?' এই প্রশ্নের রন্ধ্রেই নিহিত থেকে যায় ‘কে খুঁজছে?' প্রশ্নের বাধ্যতা। অর্থাৎ, খোঁজের বয়ানে বারংবার বিষয়ী অন্তরায়, যেন নিশ্চিত কোনও পরিণতির বিপ্রতীপে প্রহরীর মতো সজাগ তাঁর উপস্থিতি।