জমাট শীতে উত্তরবঙ্গের গ্রামে গ্রামে

সবুজ চা-বাগানে ঘেরা নিস্তরঙ্গ গ্রাম, ফলে ভরা কমলালেবু বাগান, বৃষ্টি ধোয়া আকাশে হেসে ওঠা কাঞ্চনজঙ্ঘা, ডিসেম্বরের জমাট শীতে উত্তরবঙ্গের ভ্রমণকথা।

- রবীন চক্রবর্তী

দা র্জিলিং মেল ভোরে কিশনগঞ্জ অতিক্রম করার আগেই ট্রেনের জানলা দিয়ে | চোখে পড়ে উত্তর দিগন্তে বিরাজমান কাঞ্চনজঙ্ঘাকে। তবে আজ ২০২৩-এর ডিসেম্বরের ৩ তারিখ। ভরা শীতকাল। কুয়াশার জন্য কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন হল না। আমাদের ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছল সকাল আটটায়। স্টেশন থেকে বেরিয়ে প্রতীক তামাংয়ের গাড়িতে সস্ত্রীক চললাম কার্শিয়াং শহরের দিকে। গাড়ি মহানন্দার সেতু অতিক্রম করল। বাঁদিকে শিলিগুড়ি স্টেশন দেখা যাচ্ছে। শহর এলাকা ছাড়াতেই চারদিকে ছেয়ে ছেয়ে রইল সবজ চা-বাগানের শোভা। পথ সংলগ্ন একটি রেস্তোরাঁয় মোমো আর চা দিয়ে প্রাতরাশ সেরে নিলাম। আরও প্রায় চল্লিশ মিনিট চলার পরে চোখে পড়ল পাহাড়ের উপর কার্শিয়াং শহর। কিন্তু শহরে প্রবেশ করেই পড়তে হল যানজটে। শম্বুক গতিতে চলতে চলতে একবার শহর থেকে বেরনোর পর, দিলারাম হয়ে মাহালদিরাম পৌঁছতে বেশি সময় লাগল না।

মাহালদিরামের শীত চা-বাগানে ঘেরা মাহালদিরামের শান্তশ্রী যে-কোনও পর্যটককে মুগ্ধ করবে। আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে পথ সংলগ্ন সালামান্ডার জাঙ্গল ক্যাম্পে। এই হোমস্টের দায়িত্বে থাকা বাপী দত্ত আমাদের পূর্ব পরিচিত। রাস্তার ধারে আমাদের গাড়ি থামতেই, বাপীবাবু এগিয়ে এসে আমাদের নামতে বারণ করলেন। জানা গেল, একটি বিয়ে উপলক্ষে হোমস্টের সবক'টি ঘর বুক করা আছে আজ পর্যন্ত। আজ আমাদের থাকার বন্দোবস্ত করা হয়েছে অদূরবর্তী অন্য একটি হোমস্টেতে। আগামীকাল সকালেই আমরা এখানে চলে আসব। অন্য যে-হোমস্টেটিতে রাতে আমাদের থাকা, তার মালিক দীপেশ তামাং। কয়েক মিনিটের মধ্যে

সেখানে পৌঁছেই আমার ভিতরে কেউ যেন বলে উঠল, ঠিক এরকম একটা জায়গার ছবিই তো মনের কোণে চাপা পড়ে ছিল এত দিন ! প্রথম সুযোগেই কটেজের বারান্দায় চেয়ারা নিয়ে বসলাম। সামনেই ফুলের বাগান । বাগানের পরে চা-বাগান ধাপে ধাপে নেমে গেছে উপত্যকার দিকে। আমাদের ঘরটি আকারে বেশ বড় নয়, তবে সুবিন্যস্ত। হোমস্টেতে আপাতত আমরা দুজন ছাড়া অন্য অতিথি নেই। দুপুরে আমাদের জন্য রান্না হল সরু চালের ভাত, রাই শাক, মুসুর ডাল, পাঁপড়, স্কোয়াশের সবজি এবং ডিমের ডালনা। দীপেশ তামাংয়ের স্ত্রী দুর্গার হাতের রান্নার তারিফ করতেই হয়।